বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পোশাকশ্রমিকের গাড়ি নেই, কারখানায় যেতে ভরসা দুই পা  

  •    
  • ২৮ জুন, ২০২১ ১৪:০৫

চাকরি হারানোর শংকায় অনেক পোশাকশ্রমিক হেঁটে পাড়ি দিয়েছেন কিলোমিটারের দূরত্ব। আরও দূরের গন্তব্যের শ্রমিকেরা অল্প কিছু যানবাহন দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়েন। কর্মস্থলে পৌঁছানোর তাড়ায় ছিল না কোনো স্বাস্থ্যবিধি।

শাটডাউনের আগে তিন দিনের সীমিত লকডাউনে রিকশা ছাড়া সব গণপরিবহন বন্ধ। তবে খোলা রয়েছে অফিস ও কলকারখানা। হুট করে আসা এই সিদ্ধান্তে সোমবার সকালে তীব্র ভোগান্তিতে পড়েন কর্মস্থলগামী হাজার হাজার মানুষ।

সাভারে বেশির ভাগ পোশাক শ্রমিক হেঁটেই রওনা হন কারখানার দিকে। দূরের গন্তব্যের শ্রমিকেরা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেছেন রাস্তায়। পরে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গাদাগাদি করে চড়েছেন অনুমোদনহীন বিভিন্ন যানে।

ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা প্রায় এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধও করেছেন।

সোমবার ভোর ৬টা থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের হেমায়েতপুর, উলাইল, সাভার বাসস্ট্যান্ড, রেডিওকলোনি, নবীনগর এলাকায় গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায় পোশাকশ্রমিকদের। একই চিত্র ছিল আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা ও টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কে।

আশুলিয়ার বাইপাইল ত্রিমোড় এলাকায় দেখা গেছে, চাকরি হারানোর শংকায় অনেকেই হেঁটে পাড়ি দিয়েছেন কিলোমিটারের দূরত্ব। আরও দূরের গন্তব্যের শ্রমিকেরা অল্প কিছু যানবাহন দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়েন। কর্মস্থলে পৌঁছানোর তাড়ায় ছিল না কোনো স্বাস্থ্যবিধি।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের রেডিওকলোনি এলাকায় পার্টেক্স গার্মেন্টসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক জানান, সকাল ৬টা থেকে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। অনেকক্ষণ পরপর এক-একটা গাড়ি আসে। ভিড়ের কারণে তাতে ওঠা যায় না। ভাড়াও নেয়া হচ্ছে বেশি।

তিনি বলেন, ‘গার্মেন্টসে এক দিন না গেলে বেতন কাটা যাবে। সব কিছু খোলা রেখে পরিবহন বন্ধ করে এ কেমন লকডাউন।’

সোহেল রানা নামের আরেক পোশাকশ্রমিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা চায়। আমরা ব্যাতনি (বেতন) পাই ৮ হাজার ট্যাকা। পোষাইবো এত ট্যাকা গাড়ি ভাড়া, রিকশা ভাড়া দিয়া যাইয়্যা? দেরি কইরা গার্মেন্টসে গেলে আবার বাইর কইরা দেয়। কয় তোরা জাগা। সকাল ৬টা থাইকা ৮টা পর্যন্ত গাড়ির লাইগা রইছি। গাড়ি পাই নাই।’

জিকে গার্মেন্টসের পোশাকশ্রমিক আল আমিন বলেন, ‘পোশাক কারখানা খোলা। পরিবহন নাই। আমরা যামু কী দিয়া? এটা কোন ধরনের লকডাউন দিছে সরকার? অফিস-আদালত খুইলা, ব্যাংক খু্ইলা। সরকারি গাড়িঘোরা, প্রাইভেট সব চলে। খালি পরিবহন নাই। তাহলে অফিসে যামু আমরা কী দিয়া?’

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লকডাউন আসলে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য নাটক। এটাকে নাটক বলব এই কারণে যে, যেখানে লাখ লাখ শ্রমিক কারখানায় কাজ করেন সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য সরকারের আন্তরিকতা নেই। বিভিন্ন জায়গায় কিন্তু শ্রমিকরা করোনাতেও আক্রান্ত হচ্ছেন।

‘শ্রমিকদের করোনার টেস্ট এবং ভ্যাকসিনও দেয়া হয়নি। আবার এই লকডাউনের ঘোষণা দিছে এবং আগামী বৃহস্পতিবার থেকে শাটডাউন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আমরা মনে করছিলাম, সরকারের অন্তত এইবার বোধগম্য হবে। তারা শিল্প-কারখানাগুলো বন্ধ রাখবে। শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি যাতে মানে সেই ধরনের উদ্যোগ তারা নেবে।’

খাইরুল আরও বলেন, ‘স্পষ্টভাবে গার্মেন্টস মালিকদের কোনো নির্দেশনা দেয়া হলো না যে, তারা শ্রমিকদের কীভাবে আনা-নেয়া করবেন? যার কারণে কারখানা খোলা রেখে এই লকডাউন বাস্তবায়ন করা বা স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা কোনোভাবেই সম্ভব না।

‘আমি মনে করি, আগামী বৃহস্পতিবার থেকে সরকার যে কঠোর লকডাউন দেবে, সেই লকডাউনে কারখানা বন্ধ রাখতে হবে। আর না হলে কারখানায় শ্রমিকরা যাতে নিরাপদে মালিকদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কাজে যেতে পারেন তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে। যে মালিকরা এই ধরনের ব্যবস্থা নেবেন না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

তিনি সতর্ক করে বলেন, শ্রমিকরা যেভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন, তাতে তারা যেকোনো সময় লকডাউন ভেঙে রাজপথে নামবেন।

এর আগে সকালে কাজে যেতে ঘর থেকে বেরিয়ে কোনো পরিবহন না পাওয়ায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন সাভারের বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের রেডিওকলোনি এলাকায় সোমবার সকাল ৮টার দিকে সড়ক অবরোধ করেন তারা।

সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ করিম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকাল ৮টার দিকে কিছু শ্রমিক রেডিওকলোনি এলাকায় সড়কে বিক্ষোভ করেছেন। গণপরিবহন সংকট ও বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ তাদের। পরে আমরা তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে এক ঘণ্টা পর যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।’

এ বিভাগের আরো খবর